হালচাল ১৮।০৮।১৪ ইং
লিখেছেন লিখেছেন মামুন ১৮ আগস্ট, ২০১৪, ১২:৫২:২৬ দুপুর
এক.
প্রতিদিন একটু একটু করে মানুষ হচ্ছি।
অনেকেরই ভ্রুযুগল ইতোমধ্যে হয়ত দিক পরিবর্তন করেছে। কি বলছে ব্যাটা! মানুষ হচ্ছে ? হ্যা, মানুষের গুন নিজের ভিতর ধারণ করছি। এটা কি মানুষ হওয়া নয়? চলার পথে আমাকে অনেকবার প্রমাণ করতে হয় যে আমি মানুষ । সৃস্টির সেরা জীব।
প্রতি শনিবার ক্যাম্পাসের বিশমাইল গেট থেকে বাসের অপেক্ষায় থাকি। ভোর ৫টার দিকে । সেখানে আরো অনেক সেলাই বন্ধু ও দিদি মনিদের কেও দেখি। ওরাও আমাকে দেখে। আমার আর ওদের গন্তব্যের পথ সোজা হওয়াতে এই দেখা। ওরা প্রতিদিন... আর আমি সপ্তাহে একদিন। আমাদের আসল গন্তব্য কি এক নয়?
বিরাট কোনো দার্শনিক কথা বলে ফেললাম মনে হচ্ছে! মানুষের আসল গন্তব্য তো মৃত্যুপরবর্তী জীবন- এটা সবাই জানে।
নিজেকে চোখ রাঙ্গালাম। ভনিতা না করে আসল কথায় চলে যা।
বাসে উঠলেই বাসযাত্রী ও কন্ডাক্টার এর মধ্যে বচসা হবেই। কারো না কারো সাথে রোজই এটা হতে দেখি। ভাড়া নিয়ে। কেউ হয়ত একবার দিয়েছে। ভুলে কন্ডাক্টর আবার চেয়েছে। এর জন্য অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ। অনেক সময় উত্তম-মধ্যম ও জোটে। দলে ভারী থাকে এই যাত্রীরুপি মানুষেরা। তবে সময় সময় কন্ডাক্টরও গোয়ার্তুমি করে থাকে। দু’ এক টাকার জন্য তখন অনেক ভদ্রবেশীদেরকে অকথ্য ভাষা ব্যবহার করতে শুনি।
এটা কিসের জন্য? আমাদের অন্য অনেক দিক থেকে হাজার হাজার ট্যাক্সের টাকা মন্ত্রী-আমলারা মেরে দিয়ে খেয়ে যাচ্ছে, সেখানে কিছু করার জো নেই বলেই কি এই দু’একটি টাকার জন্য এতো হিংস্রতা? বেশীরভাগ জনগন ই জানে না তাদের পরিশ্রমলব্ধ টাকার শ্রাদ্ধ হচ্ছে।
তাই প্রতিদিন ই একটু একটু করে নিজের ও অন্যের ভিতর বাস করা অমানুষ রুপটি বের হতে দেখি।
তখন খুব মানুষ হতে ইচ্ছে করে।।
দুই.
হিংস্র কথাটি বললেই বাঘের কথা এসে যায়।
কেন?
‘হিংস্র বাঘের মতো সে ঝাপিয়ে পড়লো’ ... এরকম অনেক কথা আমরা সচরাচর ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু আমার কাছে আমাদের মানুষকেই সব থেকে হিংস্র মনে হয়। প্রকৃতিগত ভাবে।ধরুন টিভি দেখছি, জিওগ্রাফী চ্যানেলে যখন একটা হরিণকে বাঘে তাড়া করে, তখন সবাই আমরা মনে মনে প্রার্থনা করি যেন হরিণটাকে বাঘ ধরতে না পারে। শেষ পর্যন্ত হরিণ ধরা পড়ে এবং তাকে ছিন্নভিন্ন করার দৃশ্য দেখে মনের কষ্ট অধিক বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এই বাঘের হিংস্রতা দেখার অনতিকাল পরেই আমরা ডাইনিং টেবিলে বসে খাশীর গোশত কিংবা মোরগের রান চিবাতে দ্বিধা করিনা।
বাঘ তার স্বাভাবিক খাবার এর প্রয়োজনে এই হিংস্রতার প্রদর্শন করে। নিজেকে বাঁচানোর তাগিদে। সে তো আমাদের মত ভেজিটেরিয়ান না। আমরা ভেজিটেরিয়ান হয়েও বেঁচে থাকতে পারি। বাঘ পারে না।
আমরা অনেক অপ্রয়োজনেও অন্যের ক্ষতি করি। খেয়ালের বশেও হিংস্রতার প্রদর্শন করি। সারা বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের নামে নিরীহ নারী-শিশুদেরকে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের দ্বারা ছিন্ন-ভিন্ন করে দেয়া, আমাদের দেশেও কর্মস্থল থেকে ধরে নিয়ে রক্ষক কতৃক নিরীহ জনগনকে হত্যা করে পেট চিরে নদীতে লাশ গুম করার খবরও তো পাই নিউজ মিডিয়ায়। তাহলে উদাহরণ দেবার বেলায় বাঘকে কেন টানা?
আজ থেকে বলা শুরু করবো, ‘হিংস্র মানুষের মত সে ঝাপিয়ে পড়ল’!
তিন.
বেশ আগের ঘটনা।
কেয়ারটেকার সরকারের দাবীতে বিরোধী দলের আর সরকারের ভিতর টাগ অব ওয়ার চলছে। এক সকালে অফিসে এসে বসেছি মাত্র।
একজন খবর নিয়ে এল। সবগুলো দাঁত বের করে দিয়ে বলল,
: হরতালের সমর্থনে গতকাল রাতে ও আজ সকালে ঢাকায় প্রচুর গাড়ি ভাংচুর হয়েছে। একজন পুলিশের দারোগও নাকি মারা গেছে।
এই লোক কঠিন বিএনপি এক্টিভিস্ট জানতাম। তবে কথা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বলে নয়। অনেক আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। মনে হয় আমাদের কোনো এক ক্লাশের পাঠ্য ছিল। ‘... এক জন মাঝি তার নৌকা নিয়ে মানুষ কে পারাপার করে তার জীবিকা নির্বাহ করত। একদিন তার সেই যায়গায় লঞ্চ চালু হলে তার পসার কমে যায়। খেয়ে পরে বেঁচে থাকাই দায় হয় তার জন্য। সে মনে মনে লঞ্চটি ডুবে যাবার প্রার্থনা করে। একদিন সত্যি সত্যি ই লঞ্চটি ডুবে যেতে থাকে। ডুবন্ত মানুষদের আর্তনাদ মাঝির কানে এলে তার বোধোদয় হয়। লঞ্চ মানে ই তো শুধু একটা স্টীলের অবকাঠামো নয়। এর ভিতরে রয়েছে শত শত মানুষ। তার নিজের দুঃখ-কস্টকে ভুলে মাঝি নৌকা নিয়ে ডুবন্ত মানুষদেরকে উদ্ধারের জন্য এগিয়ে যায়।‘
আমাদের দেশের রাজনীতিতে সংস্লিষ্ঠ সকলের ভিতর এই সামান্য একজন (আসলে সে অসামান্য) মাঝির বোধোদয় কবে হবে? হরতালের পক্ষে বা বিপক্ষে সমর্থন দিতে গিয়ে নিরীহ জনগনকে আঘাত করার অধিকার কি কারো আছে? গাড়ির ভিতরে কি মানুষ থাকে না? আবার দু’দলই জনগনের কল্যানে নাকি রাজনীতি করছে?
এই সকল ভন্ডামি’র দ্রুত অবসান হয়ে সকলের ভিতর ‘মাঝিবোধ’ ফিরে আসুক!
বিষয়: বিবিধ
৮০৫ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন